Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রকৃতিক দূর্যোগ সমুহ

কয়রায় থানার বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ

সাগর, নদী  আর সুন্দরবন পরিবেষ্টির এ অঞ্চল । বিশেষ করে সমুদ্র উপকুলবর্তী হওয়ায় এ অঞ্চল ঝড়, প্লাবন, খরা, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে বারংবার পতিত হয়। সুদূর অতীত কাল থেকে যে সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের  শিকার হয়ে আসছে , সে গুলোর মধ্যে সর্বর্র্ প্রথম ঝড় ও সামদ্রিক প্লাবনের নাম উল্লেখ করতে হয় । সাগর  উপকুলে অবস্থিত নদী- নালার এ অঞ্চল।  এর উপর ঝড় ও সামদ্রিক প্লাবনের প্রকোপ অত্যন্ত বেশী । এ সব প্রকৃতিক  বিপর্যয়ের ফলে বার বার ক্ষয় -ক্ষতি হয়েছে অপরিসীম । লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানী সহ বন্য ও গৃহপালিত পশু -পক্ষীর  প্রাণহানী ঘটেছে ব্যাপক । এ ছাড়া ঘর বাড়ি গাছ পালা ও ফসলের ক্ষতি সাধন হয়েছে অপরিসীম। সুন্দরবনের এতদাঞ্চলে সৃষ্টির পর থেকে এ পর্যন্ত যত গুলো বিপর্যয় ঘটেছে , তার সব গুলোর  বিবরণ পাওয়া এক দুরূহ বিষয়। তবে বিভিন্ন  তথ্যের ভিত্তিতে যে গুলোর বিবরণ পাওয়া গিয়েছে তা এখানে তুলে  ধরা  হলো ।

এ সমস্ত  প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু কয়রা নয় বরং খুলনা জেলা সহ তৎ পাশ্ববর্তী জেলা যেমনঃ সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী প্রভৃতি স্থানের উপর দিয়ে বয়ে গেছে । তবে প্রায় প্রতিটি দুর্যোগ কয়রার এ জনপদের উপর ছোবল দিয়ে গেছে।

                                       

১৫৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ঝড় ও প্লাবনঃ

সম্রাট আকবরের রাজত্ব কালে এক ভয়াবহ ঝড় ও প্লাবন হয়। র্দীঘ ৫/৬ ঘন্টা প্রবল বৃষ্টি ও বজ্রপাত সহ সমুদ্রের লবণ পানিতে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। সন্ধ্যায় ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে সুন্দরবন সহ খুলনা জেলার বিরাট এলাকা পানিতে একাকার হয়। এ ঝড় এবং প্লাবনে প্রায় দু’লাখ মানুষ মারা যায়। এ ছাড়া পশু পক্ষী সহ ঘরবাড়ী ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক হানি হয়। এমনকী বড় বড় গাছুগাছালী, নৈাকা, জাহাজ, ধ্বংস হয়। এ ঝড়ের পর মহারাজা প্রতাপাদিত্য যশোর রাজ্যের রাজধানী মাটির বাঁধদিয়ে সুরক্ষিত করেন।

 

১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দের ঝড় ঃ

এই ঝড় ও প্লাবণ ছিল তীব্র গতি সম্পন্ন । হুগলীর মোহনা থেকে পূর্বে সুন্দর বন এলাকা ব্যাপক ক্ষতি গ্রস্থ হয় ।

 

১৭০৭ খ্রিস্টাব্দের ঝড়ঃ

এই ঘূণিঝড়ে সুন্দর বন এলাকায় প্রচুর জানমালের ক্ষতি হয় ।

 

১৭৩৭ খ্রিস্টাব্দের ঝড়ঃ 

এই  ঝড়ের সাথে ভুমি কম্প ও হয়। অনেকর মতে এই ঝড়ের পর সুন্দরবন এলাকা জন শুন্য হয়ে যায়।

 

১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ঝড় ও প্লাবনঃ

                         এই ঝড় ও প্লাবনে  মানুষ ,পশু ,পক্ষী সহ  ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

 

১৮৬৭খ্রিষ্টাব্দের ঝড় ও প্লাবনঃ

                   এই ঝড় ছিল এক ভয়াবহ। এমন বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে  বিপর্যয় এই প্রথম। সাগরদ্বীপ থেকে সুদূর পাবনা পর্যন্ত দর্যোগ ছিল অন্তহীন। ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ ছিল অকল্পনীয় ।

 

১৮৬৯খিষ্টাব্দের ঝড়  ও প্লাবনঃ

পূর্ববর্তী দু’টো এবং এই ঝড় প্লাবন সম্বন্ধে মনীষী হান্টারের (Hunrer)মতে, এ গুলো যদি ও কিছু এলাকায় প্রচর ক্ষতি সাধন করে তবে কোন কোন এলাগায় ছিল ক্ষতির পরিমাণ আংশিক। সুন্দরবন এলাকায় সমগ্র অঞ্চল এতে ক্ষতি গ্রস্ত হয়নি।

১৬ মে তারিখের এই সর্বনাশা ঝড়ের সাথে জলোচ্ছাসের প্লাবন পশর এবং হরিণঘানা নদীদিয়ে উপরের  দিকে উঠে আসে। এতে নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত বিচ্ছিন্ন গ্রাম সমুহ নির্মম ক্ষতির শিকার হয়। মাঠে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, বাড়িঘর চুরমার হয় এবং সমস্ত ভান্ডার নষ্ট হয় । গবাদি পশু ভেসে ডুবে মারা যায়। এ ঝড়ে মোড়েলগঞ্জে ২৫০ জন লোক মারা যায়। বাখরগজ্ঞ জেলা ও বেশ ক্ষতি গ্রস্ত হয়।

 

১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ঘূর্নি ঝড়ঃ&

এ ঘর্নিঝড়ে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মারা যায়। অন্যান্য ক্ষতির পরিমাণ ও ছিল  ব্যাপক। ঝড়ের পর ব্যাপক আকারে  কলেরা দেখা দেয়।

 

১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ঘূর্ণিঝড়ঃ

এবারের ঘূর্ণিঝড় প্রবাহিত হয় সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার উপর দিয়ে । বাগেরহাটে  প্রবল জলোচ্ছাসে ফসলের জমি ডুবে যায়।

 

 ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের ঝড় ও প্লাবনঃ

১৭ ও ১৮ মে তারিখে এই ঝড় ও প্লাবন হয়। এর আগে আন্দামান দ্বীপ পুঞ্জের নিকটবর্তী এলাকায় নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয়। ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১২৩ কিঃ মিঃ। জেলার প্রাণহানির সংখ্যা মোট ৬৯৮; শুধু শরণ খোলায় ছিল মোট ৫০০ জন। জেলার গবাদি পশু হানি হয় ৭০৬৫৪টি। ও’মালী (০’mauay ) এই সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত মনে করেন।

 

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ঝড় ও প্লাবনঃ

এবার ও বঙ্গোপসাগরের নিম্ন চাপ ছিল অন্যতম কারন। ২৪ সেপ্টেম্বর সকল ৯টার দিকে ঝড় উপকুলে আঘাতহানে । সন্দ্যার দিকে জেলার অভ্যন্তরে আঘাত হানে । ঝড়ের বেগ এবং তীব্রতা ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের ঝড় ও প্লাবনের মত ছিলনা। লোক হানির সংখ্যা ৪৩২ জন এবং গবাদি পশু হানির সংখ্যা ২৮০২৯।

 

১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ঝড় ও প্লাবনঃ

তীব্র ঝড় ও জলোচ্ছাসের অন্যতম কারণ ছিল বঙ্গোপসাগরেরনিম্নে চাপ। ৯মে রাতে ১৬০ কিঃ মিঃ বেগে তীব্র গতি সম্পন্ন এ ঝড় শুরু হয় জেলার দক্ষিন পূর্বাঞ্চলে। পরদিন দুপুর পর্যন্ত ছিল এই ঝড়ের তীব্রতা। উপকুলবর্তী এলাকা ডুবে যায়। এতেও প্রাণ হানি সহ ব্যাপক ক্ষতি হয়।

 

১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ঝড় ও প্লাবনঃ

        বস্ত্ততঃ এই ঝড় ও প্লাবন প্রচন্ত্  আঘাত হানে বরিশাল , পটুয়াখালি এবং  নোয়াখালিতে। এ সময়ও খুলনা অঞ্চলে  ১৬৫ কিঃ মিঃ বেগে ঝড় বয়ে যায়। ১১ও ১২মে এই ঝড়ে সুন্দর বনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে জলোচ্ছাস হয়। এ ঝড়ে জেলায় কোন প্রাণ হানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে গবাদি পশু ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।

 

১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ঝড়ঃ

        অক্টোবর মাসের ১ তারিখে এই ঝড় হয়। পূবাঞ্চলীয় জেলা গুলোতে প্রচুর ক্ষয় ক্ষতি হলেও খুলনা জেলার বা এ অঞ্চলে তেমন বিশেষ ক্ষতি হয়নি। কোন প্রাণ হানির খবর পাওয়া যয়নি।   

 

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ঝড় ও প্লাবনঃ

         ‘‘এই বছর অক্টোবরের ২৩ তারিখে প্রথম ঝড় হয়। দ্বিতীয় ঝড় হয় নভেম্বরের ১৩ ও ১৪ তারিখে। জেলার হরিনঘাটার ও  ধলেশ্বর তীরবর্তী এলাকা এবং উপকুলীয় দ্বীপাঞ্চল অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশের ইতিহাসে এত বড় ঝড় ও জলোচ্ছাস আর হয়নি । এই ঝড়ে  পটুয়াখালী ,ভোলা, এবং নোয়াখালির দক্ষিনাঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ লোক মারা যায়। সেই অনুপাতে গবাদি পশু, ঘরবাড়ি এবং অন্যান্য সহায় সম্পদ নষ্ট হয়। খুলনা জেলার দ্বীপাঞ্চালে মাছ ধরারত অনেক জেলে এবং শরণখোলার বর্গী অঞ্চলে কিছু প্রাণহানী ঘটে। শরণখোলা এলাকা বাধেঁর ভিতরে থাকার ফলে জলচ্ছাসের পানি অভ্যান্তর ভাগে প্রবেশ করতে পারেনি। বাধেঁর বাইরে প্রচুর ঘর-বাড়ী এবং গবাদী পশু ধবংস হয়ে যায় এই ঝড়ে। শরণখোলার ব্যাপক অঞ্চলে আমন ফসল প্রায় সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়।’’           (খুলনা জেলার মোঃ নুরুল ইসলাম, পৃঃ ১১১-১১২)।

 

            ‘‘২০৮ কিঃ মিঃ তীব্রতা সম্পন্ন ভয়াবহ ঝড়ে তান্ডবলীলা ঘটে খুলনা অঞ্চলে হরিণঘাটা, ধলেশ্বর তীরবর্তী এলাকা এবং উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চল অস্বাভাবিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ঝড়ের সাথে প্রায় ১৬ ফুট উঁচু ভয়ানক জলোচ্ছাস দেখা দেয়। স্মরণকালে এত ব্যাপক ও ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোন নজীর জানা যায় নি। ঝড় ও জলোচ্ছাসের সকল এলাকা মিলে মোট প্রায় ৫ লাখ লোক ১০ লাখ গবাদী পশু ছাড়াও অসংখ্যা জীবজন্তু প্রাণ হারায়। এতে বর্ণনাতীত পরিমান শস্য ও বিষয় সম্পত্তি ধবংস হয়। তা ছাড়া এই দুর্যগে প্রায় সকল কাঁচা ঘর-বাড়ি বিনষ্ট হয়ে যায়। প্রায় ৩৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নষ্ট হযে যায়।  এই ঝড়ে প্রায় ৩৮০০০নৌযান এবং ৭৭০০০ জেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়’’ (খুলনা জেলা গোজেটিয়ায়-১৯৯৬। পৃঃ ৩৬)

 

১৯৮৮ খিস্টাব্দের ঝড় ও প্লাবনঃ

            এবারের ঝড়ের তান্ডর কোন অংশে কম ছিলনা। ২৯ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল ১০নং মহাবিপদ সংকত । এ ঝড়ের গতিবেগ ছিল ২১০ কিঃ মিঃ বেগে । খুলনা , বাগেরহাট, সাতক্ষীরা , ভোলা, পটুয়াখালী  প্রতৃতি জেলার সুন্দরবন অঞ্চলের উপকুলের উপর প্রচন্ড বেগে আঘাত হানে । এই ঘূনিঝড়ে ৫৭০৮ জন মানুষ ১৫ হাজার হরিণ ৯ টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার সহ ৬৫হাজার পশু মারা যায় । ফসল নষ্ট হয় কয়েক কোটি টাকার। মঙ্গলা পয়েন্টে জলোচ্ছাসের উচ্চতা ছিল প্রায় ১৫ ফুট।  

 

১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ঘূর্ণিঝড়ঃ

       শতাব্দীর সব থেকে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। ২৯ এপ্রিল প্রবাহিত হয় সমগ্র বাংলাদেশের উপর দিয়ে।

v        তথ্য সুত্রঃ ১। সতীশ চন্দ্র মিত্র - যশোহর খুলনার ইতিহাস -১ম  খন্ড পৃঃ ৯০-৯২ 

                         ২। মোঃ নূরুল ইসলাম-খুলনা জেলা পৃঃ ১০৮-১১১

 

বন্যাঃ

      পার্বত্য ঢলের বন্যা খুলনা জেলায় তেমন ব্যাপক আকারে কখনও দেখা যায়নি। গংগা, পদ্মায় যখন পানি বৃদ্বি পায় তখন স্বভাবতই এ জেলার নদী  গুলোতে পানি বৃদ্বি পায়। কুল ছাপানো বন্যা সৃষ্টির আগেই পানি সমৃদ্রে গমনের সহজ পথ খুজে পায়। ফলে ব্যাপক আকারে বন্যার সৃষ্টি করতে পারে না। এ ধরনের পানি স্ফীতির ফলে উত্তরাঞ্চলে মাঝে মাঝে  বন্যা দেখা দেয়, তবে সে সব বন্যায় রূঢ়তা শতাব্দী পূর্বের বন্যার মত নয়। এখন খুলনা অঞ্চলে বন্যার প্রকৃতিতে যা দেখা যায় তা ভিন্ন ধরনের বন্যা। সুন্দরবন ব্যতীত জেলার বেশীর ভাগ অঞ্চল এখন উপকূলীয় বাঁধ পরিবেষ্ঠিত। বাঁধ এলাকার অভ্যন্তরে নদী এবং খাল গুলো প্রায়ই পলিতে ভরে গেছে। অন্যদিকে স্লুইজ সমূহের বাইরে ও নদীতে পলি জমেছে। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কারণে স্লুইজ গুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন না। ফলে এক টানা বেশী দিন বৃষ্টিপাত হলে অভ্যন্তরের নদী, খাল অতিরিক্ত পানির স্থান সংকুলান করতে পারে না, স্লুইজ ঠিক থাকলেও বাইরে পলি জমার কারণে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশণ হয় না। আর যেখানে স্লুইজ অকেজো সেখানে সহজেই অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। হাজার হাজার একর জমি পানির নিচে তলিয়ে শস্য হানি হয়। এ ধরনের বন্যা গুলোর মধ্যে ১৮৭১ ১৯৮৫, ১৮৯০, ১৯০০, ১৯৬৮, ১৯৭০, ১৯৭৮ এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বন্যা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

            উক্ত কন্যা গুলো খুলনা জেলা ও তার আশে পাশের জেলা গুলোতে হয়েছে এবং এ গুলোর প্রভাব ব্যাপক ও বিস্তর ছিল ফলে বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট এই বন্যা গুলোর কোন না কোনটার প্রভাব এ অঞ্চলের উপর পড়েছে এতে কোনসন্দেহ নেই।

 

১৮৭১খ্রিস্টাব্দের বন্যাঃ

তদানীন্তন যশোরের কালেক্টরের ভাষায়,- ‘‘এই বন্যা স্মরণ কালের ভয়াবহতম বন্যা ছিল। মে এবং জুন মাসের প্রথম দিকে প্রবল বর্ষনের ফলে জেলার নদীগুলো দ্রুত স্ফীত হতে থাকে। আগষ্টে প্রায় সমগ্রজেলা বন্যায় তলিয়ে যায়। জন সাধরণ চরম দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে শস্য এবং গবাদি পশুর ভাষণ ক্ষতি হয়’।    

            ২৪ পরগনা জেলার কালেক্টরের ভাষায়,- ‘‘অতিরিক্ত বৃষ্টি পাতের ফলে জেলার পূর্ব এবং উত্তর পূর্বাংশে প্রবল বন্যা হয়। প্লাবিত অংশে আমন ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর খাদ্যের অভাবে এবং পঁচা ঘাস খেয়ে অনেক গবাদী পশু মারা যায়।’’

 

১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের বন্যাঃ

            এই বন্যা ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হয়। এতে প্রচুর ক্ষতি সাধন করে। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের নিকট ভাগীরথীর বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পায়। বন্যায় সাতক্ষীরা ও তার আশ পাশের জেলা গুলেতে এর প্রভাব পড়ে। এ বন্যায় আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ছাড়া ঘরবাড়ি ও গবাদি পশুর ও ক্ষয় ক্ষতি অপরিসীম।

 

১৮৯০খ্রিষ্টাব্দের বন্যাঃ

            গংগায় অতিরিক্ত পনি বৃদ্ধির ফলে জলংগী ইত্যাদি শাখা নদীতে বন্যার সৃষ্টি হয়। ফলে নিম্ন বঙ্গে বন্যায় প্লাবিত হয়। বিপুল শস্য হানি হয়।

 

১৯০০ খ্রিস্টাব্দের বন্যাঃ

            সেপ্টেম্বর মসে এ বন্যা হয়। সাতক্ষীরায় বেশী ক্ষতি হয়। এ বন্যায় সমগ্র নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। ব্যাপক ফসল হানি ঘটে।

 

১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের বন্যাঃ

            বছরের মাঝামাঝি সময় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এতে মরলগঞ্জ, শরণখোলা এবং মোল্লাহাট থানার ২৫ বর্গ মাইল এলাকা প্লাবিত হয়। সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়, ব্যাপক আমন ফসলের ক্ষতি হয়। পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বেনাতলা বাঁধ ভেঙে প্রায় ৫০ হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয় এবং ৪০০ ঘরবাড়ি ডুবে যায়।

 

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের বন্যাঃ

            অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে সমগ্র জেলা বন্যা প্লাবিত হয়। সবথেকে বেশী ক্ষতি হয় সাতক্ষীরা মহকুমায়। ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সাতক্ষীরা মহকুমায় প্লাবিত হয় ৬৫০ বর্গমাইল এলাকা। প্লাবিত এলাকার সাতক্ষীরা, করারোয়া, তালা এবং দেবহাটার ৬০% ফসল ও আশাশুনি, শ্যামনগর, কালিগঞ্জ থানায় ৪০% ফসল নষ্ট হয়ে যায়। বাগেরহাট মহকুমায় ও ক্ষতির পরিমান কম ছিল না। বেশী ক্ষতি হয়েছিল ফসলের। মোট ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪/৫ কোটি টাকা।

 

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের বন্যাঃ

            অক্টোবর মাসে এই বন্যায় সমগ্র সাতক্ষীরা মহকুমা, সদরের পাইকগাছা, ডুমুরিয়া এবং দাকোপে আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অতি বর্ষণ জনিত কারণেই এ বন্যা হয়। সাতক্ষীরা মহকুমার ক্ষতির পরিমণ ছিল সবচেয়ে বেশী। এখানে আমন ফসলের ক্ষতি হয় প্রায় ৬০%। অনেক ঘরবাড়ি পড়ে যায়, বহু গবাদি পশু মারা যায়। লোকায়ত রাষ্ট্রপতি লেঃ জেঃ জিয়াউর রহমান ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

 

১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের বন্যাঃ

            মার্চ মাসের ২১ তারিখ থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং প্রায় একটানা এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত চলে। মে মাসে কিছুদিন বিরামের পর আবারও মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এ বৃষ্টির ফলে বোরো চাষ, আউশ চাষ এবং পাট চাষ দারুণ ভাবে ব্যাহত হয়। জুলাই মাসে আবার প্রবল বর্ষণ হলে আমন চারার অত্যন্ত ক্ষতি হয়। অতিবৃষ্টির ফলে মোল্লাহাট, ডুমুরিয়া, ফুলতলা এবং তালা এলাকার বিলাঞ্চল সমূহ ডুবে যায়। ফলে এসব এলাকায় চাষাবাদ একরকম হয়নি বললেই চলে। লোক বা গবাদি গবাদি পশু হানির খবর পাওয়া যায়নি। মোল্লাহাটে সমস্ত ফসল নষ্ট হওয়ায় দারুণভাবে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়।

 

১৯৮৭-৮৮ খ্রিস্টাব্দের বন্যাঃ

            পরপর দু’বছরই বন্যা হয়। ৭০% এলাকা প্লাবিত হলেও ক্ষতির পমিাণ সবচেয়ে বেশী ছিল মোল্লাহাট, কচুয়া, ফুলতলা ও তেরখাদায়।

তথ্য সূত্রঃ

১। সতীশ চন্দ্র মিত্র-যশোহর খুলনার ইতিহাস-১ম খন্ড, পৃঃ ৯২,৯৩

২। মোঃ নুরুল ইসলাম- খুলনা জেলা-পৃঃ ১১২-১১৫

 

খরা

            মৌসুমী বায়ু প্রধান অঞ্চলে অবস্থিত হলেও খুলনা জেলা বার বার খরার কবলে পড়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো দীর্ঘকাল বৃষ্টির অনুপস্থিতি। খরার ফলে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয় এবং মানুষ ও গবাদী পশুর প্রাণ হানি ঘটেছে বারবার। জন জীবনে নেমে এসেছে দূর্যোগ। বিপর্যস্ত হয়েছে স্বাভাবিক জীবন। খুলনা জেলা বহু খরার কবলে পতিত হলেও এ জেলার মানুষ বা দফতর সমূহ খুব কম খরার ইতিহাস সংরক্ষণ করতে পেরেছে।

            খুলনা জেলা সহ অন্যান্য এলাকায় বিভিন্ন সময়ে যেসব খরার সৃষ্টি হয়েছে তার অনেক প্রতিফলন ঘটেছে অত্র অঞ্চলে। যেহেতু এ খরা তো আর সামান্য অঞ্চল নিয়ে সৃষ্টি হয় না। প্রত্যেকটা প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটে প্রায়ই ব্যাপক বিস্তর এলাকা জুড়ে। ফলে খরার কবল থেকে কয়রার জনপদ ও রক্ষা পায়নি।

 

১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের খরাঃ

            এ বছরের গ্রীষ্ম ও বর্ষকালের প্রচন্ড খরার সারা দেশের অজন্মা এবং ফসল হানি হয়।  দেশে দারুণ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। বাংলা ১১৭৬ বঙ্গাব্দের এই দুর্ভিক্ষ ঐতিহাসিক ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে খ্যাত। এই মন্বন্তরেরর যুক্ত বাংলার এক তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। খুলনা জেলা অন্যান্য জেলার মত মন্বন্তরের সমান ভুক্তভোগী ছিল। ইতিহাসে তা ‘কাঠা’ মন্বন্তর’ নমে খ্যাত। এই মন্বন্তরের সময় টাকায় দশ সের করে ধার বিক্রয় হয়। এ খরাজনিত দুর্ভিক্ষের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে ইংরেজ কর্মচারীরা ইতস্ততঃ করেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা ব্যক্তি স্বার্থে মন গড়া বক্তব্য রেখেছেন। গভর্ণর ওয়ারেন হেস্টিং ক্ষয় ক্ষতির পরিমানকে প্রাশাসনের বিরুদ্ধে ঘৃন্য প্রয়াস বলে আখ্যাতি করেন।

 

১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের খরাঃ

            যশোরের তদানীন্তন কালেক্টরের ২০ অক্টোবর এর প্রতিবেদন থেকে মনীষী হান্টার (Hnter) লিপিবদ্ধ করেছেন- সে বছরের ঐ সময়ে একটানা ৩৮ দিন বৃষ্টি শুণ্য থাকায় খাজনা আদায় দু’বার বন্ধ রাখতে হয়, সরকার জেলার খাদ্য শস্য সমুদ্র পথে রপ্তানী বন্ধ করে দেয়। ৩১ ডিসেম্বরের দিকে অর্থাৎ আমনের নবান্নের মৌসুমে দাম দুতিন গুন বেড়ে যায়। সরকরের হুকুমে খনন করা পুকুর সমূহ কোন কাজে আসেনি। সে গুলোর পনি অনেক নিচে নেমে যায়।

 

১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের বন্যাঃ

            এ বছরের খরা নদীর পানি হ্রাস পাওয়ার কারনে নয় বরং স্থানীয় বৃষ্টিপাতের অভাবের কারনেই হয়। W.W. Hunter এর মতে এ ছিল স্মরণ কালের ভয়াবহ খরা। এই খরায় সাতক্ষীরা অঞ্চলে অজন্মা এবং প্রচুর শস্য হানি হয়।

 

১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের খরাঃ

            গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালের প্রথম দিকে খরার জন্য বোরো, আউশ, পাট ইত্যাদির চাষ দারুণ ভাবে ব্যাহত হয়। আগের বছর  অতি বৃষ্টি জনিত কারনে বন্যার ফলে সমগ্র সাতক্ষীরা মহকুমা এবং জেলার অন্যত্র কিছু এলাকায় ভয়াবহ শস্য হানি হয়। ফলে জেলায় প্রচন্ড খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। অবশ্য সারাদেশে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সরকারের যথা সময়ের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের জন্য দেশ এবং জেলা দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পায়।

 

দুর্ভিক্ষ

            দুর্ভিক্ষ কোন স্থানীয় ঘটনা নয়। দুর্ভিক্ষের পেছনে থকে একাধিক কারণ। বন্যা, খরা দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ হলে ও খাদ্যের সরবরাহ ও একটি কারন। খুলনা জেলায় যখন দুর্ভিক্ষ দেখা গেছে। খাদ্য দ্রব্য ক্রয় ক্ষমতাও দুর্ভিক্ষের পেছনে একটি কারণ হিসেবে কাজ করে। অনেক সময় খাদ্য দ্রব্য সংগ্রহের জন্য যথেষ্ট আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। আবার খাদ্য দ্রব্য অপ্রতুল অথচ লোকের হাতে টাকা-পযসা আছে, তখন ও অনেক সময় না খেয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়। এ দুঃসময়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিকাংশ মানুষ চলে আসে শহর অঞ্চলে।

            খুলনা জেলার এমন কতক গুলো এলাকা আছে যেখানে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে অথবা স্থানীয় ভাবে অজন্মা শস্যহানি ইত্যাদির জন্য দুর্ভিক্ষ বিরাজ করে।

 

১৭৬৯-৭০ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষঃ

            বাংলা ১১৭৬ বঙ্গাব্দের এই দুর্ভিক্ষ ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে খ্যাত। এ বছর গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে প্রচন্ড খরার জন্য অজন্মা এবং শস্যহানি হয়। ফলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে লর্ড ক্লাইভের দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার ফলে এই অবস্থা মোকাবেলায় শাসন এবং রাজস্ব উভয়ে কর্তৃপক্ষ চরম গাফিলতির পরিচয় দেয়। ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’ অবস্থায় দুর্ভিক্ষ চলতে থাকে।  খাদ্যভাবে সারা বাংলায় হাজার হাজার লোক মারা যেতে থাকে। উপবাসী অখাদ্য, কু খাদ্য গ্রহনের ফলে অপুষ্টি এবং বিভিন্ন জটিল রোগ ব্যাধির ফলে দিন দিন অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এইদুর্ভিক্ষযুক্ত বাংলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। এই মন্বন্তরের সময় টাকায় এক কাঠা বা এক কাঠি ধান বিক্রয় হয়। এক কাঠি বা এক কাঠা এর পরিমান এক এক জেলায় এক এক রকম। তবে  ওমেলী উল্লেখ করেন,  ১০ সের। অনেকেই এই মন্বন্তরকে কাঠা মন্বন্তর বলে আখ্যায়িত করেন। ওয়রেন হেস্টিংস গভর্ণর হিসেবে এই মন্বন্তর সম্বন্ধে সঠিক বিবরণ দেন নি। তার ভাষায় কোম্পানী এবং তার সরকারী যন্ত্রকে হেয় করার জন্য ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণকে অতিরিক্ত করে দেখানো হয়েছে।

 

১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের দৃর্ভিক্ষঃ

            ১৮৬৫ খ্রিষ্ঠাব্দের খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলে প্রচন্ড খরা হয়। এই খরার ফলে ১৮৬৬ খিষ্ঠাব্দে এই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। জুন মাসের মাঝামাঝি নাগাদ এই অঞ্চলে চালের দাম হয় টাকায় ৮ সের। ঐ বছর অক্টোবর মাসে প্রেুসিডেন্ট বিভাগের কমিশনার দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, দিন মজুর ও ভিক্ষুক শ্রেণীর মানুষদের বান কচু, সজিনা এবং তেতুল পাতা সিদ্ধ করে খেতে দেখেছেন  ও শুনেছেন।

 

১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষঃ

            এই দুর্ভিক্ষ কালিগঞ্চ এবং শ্যামনগর থানায় দেখা দেয়। এ সময় কাvালগঞ্চ নকীপুর রাস্তা নির্মাণ করা হয়। খুব সম্ভবত টেষ্ট রিলিফে এই রাস্তা নির্মিত হয়।

 

১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের খরাঃ

            ভিনসেন্টের (Vine Sent) বিবরণ থেকে জনা যায় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ, আশাশুনি, মাগুরা এবং খুলনা জেলার পাইকগাছা (কয়রা) থানার ৭৭৪ বর্গ মাইলের ও বেশি এলাকার ২,৭৬,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। সাতক্ষীরা মহকুমায় এই দুর্ভিক্ষের কারণ সম্বন্ধে তদানীন্তন কালেক্টর ডবলু, এইচ ভিন সেন্ট (W.H. Vin Sent) বলেছেন, ‘এলাকার লোকেরা ছিল গরীব এবং অদূরদর্শী। জমিদারগণ অনাবাসী এবং প্রজাদের ব্যাপারে ছিল খাম খেয়ালী। তারা গরীব ও অক্ষিম ছিল। স্থানীয় ভাবে ছোট ছোট ভেড়ি বাঁধ দিয়ে জমিকে লোনা পানির কবল থেকে রক্ষা করা হতো।মেরামতের অভাবে এই বাঁধ দিয়ে লোনা ঢুকতো। ক্রমান্বয়ে বাঁধের অবস্থার অবনতি হয়। এই সময় ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রবল ঝড় সহ জলোচ্ছাসের ফলে এই এলাকা লোনা পানিতে নিমজ্জিত হয়। পানি নেমে গেলেও লবণ উপাদান মাটিতে এমন ভাবে মিশে যায় যে, সারা বছরের র্বষায় তা ধুয়ে নিতে পারেনি।  ঐ বছর বর্ষা ও কম হয়। আমনের ফলন আশাতিরিক্ত কম হয়। আগের বছরের শস্য ঘাটতি এবং এ বছরের অজন্মা মিলে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়।

 

১৯২১ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষঃ

            ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম আশ্বিনে অসময়ের ঝড় এবং প্লাবনের জন্য নতুন রোপন করা আমনের চারা নষ্ট হয়ে যায়। ভেড়ী বাঁধ ভেঙে আবাদী এলাকা প্লাবিত হয়। ফলে জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাপক এলাকায় শস্যের ফলন অত্যন্ত কম হয়। তার উপর ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে খরার জন্য পরবর্তী আউশ এবং বোরো ফসলের চাষ ও দারুন ভাবে উপর্যু্যপুরি দুটো ফসলের ক্ষতি জেলার জনজীবনে দুর্ভিক্ষেরঅভিশাপ নিয়ে আসে। সরকারি ভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা না হলেও প্রায় আট মাস জেলায় ত্রাণ সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়।

 

১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষঃ

            বাংলা ১৩৫০ বঙ্গাব্দের এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ইতিহাসে পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে খ্যাত। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ তখন দেশের দ্বার প্রান্তে। বার্মা তখন জাপানের দখলে, জাপানী সৈন্য চট্রগ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে। ওদিকে আসামের পাবত্য অঞ্চলে ও যুদ্ধ চলছে। স্বভাবতঃ মিত্র বাহিনীর যুদ্ধ ব্যবস্থার প্রচন্ড চাপ এই ছোট দেশটার উপর। দেশের সমস্ত যোগনের ব্যবস্থা সামরিক সরঞ্জাম এবং রসদ পরিবহনে ব্যস্ত। সমুদ্রে এবং অভ্যন্তরীন নৌপথে ও নিরাপত্তাবিহীন অথবা যুদ্ধ সম্ভার চলাচলে ব্যাপৃত। প্রশাসন যন্ত্র ও যুদ্ধমুখী ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত। ঠিক এমন সময় শুরু হয় এই অকাল। খুলনা জেলা সহ সমস্ত বাংলাদেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং একই সময়ে কলেরা ও বসন্তের প্রকোপে সমগ্র দেশে ২০-২৫ লাখ লোকের প্রানহানি ঘটে। সে সময় চালের মূল্য ২০ টাকা থেকে ৮০ টাকয় ওঠে। এ দুর্ভিক্ষের খুলনা জেলার প্রায় ৩% লোক মারা যায়। (খুলনা জেলা গেজেটিয়ার- ১৯৯৬। পৃঃ ৩১)

 

তথ্য সূত্রঃ ১। সতীশ চন্দ্র মিত্র-যশোহর খুলনার ইতিহাস, ১ম খন্ড, পৃঃ ৯৩-৯৫

২। মোঃ নুরুল ইসলাম- খুলনা জেলা- পৃঃ ১১৬-১২১।

 

২০০৭ খ্রিস্টাব্দের সিডর

            সিডর নামে এ মহা প্রলয়ংকারী বিপর্যয় কক্স বাজার সহ প্রায় ১৫টি সমুদ্র উপকুলীয় জেলায় তান্ডবলীলা সৃষ্টি করে। হিরণ পয়েন্ট, দুবলার চর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়ালী, ঝালকাঠি, লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাটসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে বয়ে যায়। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার রাতে এ মহাবিপর্যয় শুরু হয়। উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত ঘোষনা করা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায় যে, সর্বোচ্চ ৪ মাত্রার হ্যারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় ‘সিডর’ ২৮০ কিঃমিঃ গতিতে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে। এর ফলে ১৫ ফুট উচ্চতা জলোচ্ছাসের সৃষ্টি হয়। রাত ৯ টায় শুরু হয়ে সকাল নাগাদ সব কিছু লন্ড ভন্ড করে দেয়।

 

            ঘুর্ণিঝড়ের আঘাত, জোয়ারের তান্ডব আর সে সংগে প্রবল বর্ষণে পুরা উপকূল এলাকায় নেমে আসে মহা বিপর্যয়। বাতাসের প্রচন্ড ঝড়োগতিতে হাজার হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি, আধাপাকা টিনের ঘর, স্কুলের চালা যেন কাগজের মত উড়তে থাকে। ফসল, গবাদি পশু সহ হাজার হাজার নৌকা ট্রলার মুহুর্তে নিখোঁজ হয়ে যায়। ঘটে অসংখ্যা প্রাণ হানি।

            সিডরের আঘাতে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় মোড়েলগঞ্জের শরণখোলা, সাউথখালী, বরগুনা অঞ্চলে।

 

 

২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ঘূর্ণিঝড় ও প্লাবন (আইলা)

            ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মে সোমবার সকাল ১০টার দিকে ‘আইলা’ নামক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগরের পানিতে প্লাবিত হয় সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল। এর মধ্যে শ্যামনগর এর অর্ধেকাংশ, কয়রা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং দাকোপের অর্ধেকাংশ প্লাবিত হয়। দেখতে দেখতে সাগরের পানি ফুলে ওঠে সমস্ত ওয়াপদার রাস্তা ছাপায়ে মাত্র ১/২ ঘন্টার মধ্যে সব কিছু ভাসায়ে নিয়ে যায়। স্মরণকাল গ্রাসী আইলায় কয়রা উপজেলায় লোকের প্রাণহানি ঘটে মোট .......... জনের। মানুষেরপ্রাণহানির সংখ্যা কম হলেও ক্ষয় ক্ষতি হয় অপরিসীম। সুন্দরবন বেষ্টিত সমুদ্র উপকূলবর্তী এ জনপদের দেড়/দু’শ বছরের মানুষের সাজানো সংসার মাত্র অল্প সময়ের মধ্যে ধুলিস্মাৎ হয়ে যায়। দীর্ঘ দুই বছর এ জল প্লাবন স্থিতি থাকার ফলে অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন ফসল, ঘরবাড়ি, হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল, ভেড়া, গাছ-পালা ইত্যাদি সম্পুর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। কয়রা উপজেলা এ যেন এক মরুভুমিতে পরিণত হয়। অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধন হয়।

            কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে আমাদী ইউনিয়নটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ গ্রস্থ হলেও অন্য ৬টি ইউনিয়ন আইলায় বিদ্ধস্ত হয়। দীর্ঘ ২০০/২৫০ বছরের সাজানো সংসার বলা যায় মুহুর্তে ধ্বংস হয়ে যায়। সাগরের উত্থিত জোয়ারের বানে ভেসে যায় সব কিছু। কয়রা উপজেলার সৃস্টি লগ্ন থেকে যে সমস্ত উঁচু স্থানে আদৌ কখনো পানি ওঠেনি, আইলায় সেখানে ৭/৮ ফুট পর্যন্ত পানি উঠেছিল। বলা অতুক্তি নয় যে, কয়রা উপজেলা কিছুক্ষণের জন্য সাগরে পরিণত হয়েছিল। জলের কড়কড়ে স্রোতে কাঁচা ঘর-বাড়ি, আসবাব পত্র, চাল-ডাল, তরি-তরকারী, অন্যান্য তৈজসপত্র সহ গৃহপালিত পশু সবকিছু যেন শেওলার মত ভেসে চলে যেতে লাগল। মানুষের কান্নার রোল আর আহাজারিতে কয়রা বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের অসহায়ত্বের  দৃশ্য মনে হলে ভয়ে গাঁ শিউরে উঠে। দীর্ঘ ২ বছর কয়রা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন আইলার ধ্বংস লীলা খেলার মধ্যে হাবুডুবু খায়। সমস্ত রাস্তা-ঘাট নিশ্চিন্ন হয়ে যায়। মহাকালের গর্ভে চিরতরে হারিয়ে যায় অসংখ্য কাঁচা ঘর,বাড়ি গাছ-পালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মন্দির। সবচেয়ে বড়ই পরিতাপের বিষয় হলো, ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন ২ বছরে আইলার লবণ পানি মুক্ত হলেও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নটি এখনও লোনা পানিতে নিমজ্জিত। সেখানে বাঁধ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় জোয়ার ভাটা খেলছে। যত দিন যাচ্ছে ইউনিয়নটি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ভয়াবহতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দরবনের কোল ঘেষা চিরসবুজ কয়রা উপজেলা আজ মরুভুমি প্রায়।

          ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে ২৫ মে কাল গ্রাসী আইলায় কয়রা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের যে সমস্ত স্থানে ওয়াপদার ভেড়ী বাঁদ ভেঙে ভাঙনের সৃষ্টি হয় নিম্নে তার তালিকা তুলে ধরা হলোঃ

 

মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নঃ(১) গিলাবাড়ি (২) মহেশ্বরীপুর ও (৩) নয়ানী। এ তিনটির মধ্যে গিলাবাড়ি ছিল খুব ভয়ঙ্কর ভাঙন।

মহারাজপুর ইউনিয়নঃ(১) পবনা ও (২) দশালিয়া। এর মধ্যে পবনা ভীষণ মারাত্মক এবং উল্লেখযোগ্য। কেননা এ পবনার ভাঙনেই বেশী ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে ৪টি ইউনিয়ন। যথা- বাগালী, মহারাজপুর, কয়রা ও উত্তর বেদকাশী। প্রথম বছর এ পবনার বাঁধটি বাঁধা সম্ভব হয়নি। তাই পরবর্তী বছরেই সম্ভব হয়। তবে এ বাঁধ আটকাতে বা বাঁধতে সরকারের ব্যয় হয় কয়েক কোটি টাকা।

কয়রা ইউনিয়নঃ-(১) ৪নং কয়রা (২) গড়িয়াবাড়ি (৩) ২নং কয়রা (৪) হরিণখোলা ও (৫) গোবরা।

 

উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নঃ- (১) পাথরখালী (২) কাঠকাটা (৩) গাজী পাড়া (৪) কাঠমারচর (৫) গাঁতিরঘেরী। এগুলোর মধ্যে পাথরখালীর ভাঙন ছিল মারাত্মক। প্রথম বারে বাঁধতে ব্যর্থ হওয়ার পর বছরই বাঁধা সম্ভব হয়।

 

দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নঃ-(১) বীনাপানি (২) পাতাখালী (৩) আংটিহারা  (৪) ছোট আংটিহারা (৫) খাশিটানা (৬) মাটিয়া ভাঙ্গা (৭) চরামুখা (৮) হারেজখালী।&ওগুলোর মধ্যে মারাত্মক ভাঙন ছিল আংটিহারা, চরামুখা ও হাজেরখালী। প্রথম বছর আংটিহারা বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু তা প্রথম বারে নয় ২য় বারে। এছাড়া চরামুখা প্রথম বছরে বাঁধ দিতে ব্যর্থ হলেও পরের বছর তা সম্ভব হয়। কিন্তু হারেজখালী দুই বছরের মধ্যে ও বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। বর্তমান সেখানে প্রতি দিনে দুইবার নদীর লবণ পানি জোয়ার ভাটা খেলছে।

 

 

ঘূর্ণিঝড় আইলায় কয়রা উপজেলা মৃত ব্যক্তিদের নামের তালিকাঃ

ক্রঃ নং

মৃত ব্যক্তির নাম

পিতা/স্বামীর নাম

ঠিকানা

০১

মোঃ বদর উদ্দীন মোল্লা

পিতা মৃত বাছের মোল্লা

মদিনাবাদ, কয়রা, খুলনা।

০২

 মোঃ দেলোয়ার সানা

পিতা মৃত তালেব সানা

মদিনাবাদ, কয়রা, খুলনা।

০৩

রহিমা বিবি

স্বামী শওকাতআলী সানা

২নং কয়রা, কয়রা, খুলনা।

০৪

ময়না

পিতা শওকাত আলী সানা

২নং কয়রা, কয়রা, খুলনা।

০৫

ফনিভূষণ মন্ডল

পিতা- মৃত অনন্ত মন্ডল

চরামুখা, কয়রা, খুলনা।

০৬

আশুতোষ মন্ডল

পিতা- মৃত অনন্ত মন্ডল

চরামুখা, কয়রা, খুলনা।

০৭

খাদিজা বিবি

স্বামী মৃত সৈয়দ মিস্ত্রী

 বেদকাশী, কয়রা, খুলনা।

০৮

নুরুন্নাহার বেগম

স্বামী হোসেন আলী হায়দার

উলা, বাগালী, কয়রা, খুলনা।

০৯

ভানু বিবি

স্বামী মৃত লাল মাহমুদ গাজী

১নং কয়রা, কয়রা, খুলনা।

১০

আরিফুল

পিতা- মাসুম গাজী

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

১১

তরিকুল

পিতা- মাসুম গাজী

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

১২

আশরাফুল

পিতা- নুর উদ্দীন গাজী

 জোড়শিং, কয়রা, খুলনা।

১৩

মোনায়েম

পিতা- কামরুল গাজী

 জোড়শিং, কয়রা, খুলনা।

১৪

 তৈয়েবুল্লাহ

পিতা- কামাল হোসেন

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

১৫

ফিরোজা খাতুন

স্বামী- নুরুজ্জামান গাজী

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

১৬

আসমা খাতুন

স্বামী- মামুন গাজী

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

১৭

নাইম

পিতা- নুর উল্লাহ গাজী

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

১৮

মরিয়ম

স্বামী- নুর উদ্দীন গাজী

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

১৯

লতিফা

স্বামী- মোশারফ খান

ঘড়িলাল, কয়রা, খুলনা।

২০

নয়ন

পিতা- মোশারফ খান

ঘড়িলাল, কয়রা, খুলনা।

২১

রহমত গাজী

পিতা- মৃত বাবর আলী

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

২২

বড় পাগলী

স্বামী- মৃত বাবর আলী

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

২৩

টুকটুকি

পিতা- হিম সাগর

 জোড়শিং, কয়রা, খুলনা।

২৪

মোন্তাজ গাজী

পিতা- ছবেদ গাজী

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

২৫

তায়জুল ইসলাম

পিতা- মোস্তফা গাজী মাটিভাংগা

 

২৬

লতিফা

পিতা- মৃত নূর আলী

 গোলখালী, কয়রা, খুলনা। 

২৭

নূরু গাজী

পিতা- মৃত কালাচাঁদ গাজী

 জোড়শিং, কয়রা, খুলনা।

২৮

দুর্জয় মন্ডল

পিতা- রমেন মন্ডল

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

২৯

সানু

স্বামী- আতিয়ার রহমান

 জোড়শিং, কয়রা, খুলনা।

৩০

মুংলী দাসী

স্বামী- রমেন মন্ডল

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

৩১

সরবানু

স্বামী- কাশেম গাজী

 জোড়শিং, কয়রা, খুলনা।

৩২

ছুইমান

স্বামী- মৃত হামিদ গাজী

 জোড়শিং, কয়রা, খুলনা।

৩৩

আছিয়া

পিতা- মহিদুল

 জোড়শিং, কয়রা, খুলনা।

৩৪

আসমা খাতুন

পিতা- মোংলা গাজী

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

৩৫

শাহরিয়া

পিতা- মনিরুল

আংটিহারা, কয়রা, খুলনা।

৩৬

 

 

 

 

 

২০০৯ সালে ২৫মে দেশের দক্ষিণ অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া আইলা ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে কয়রায় ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকাঃ

ক্রঃ নং

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ (টাকায়)

মন্তব্য

০১

কপোতাক্ষ মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

০২

বাঁশখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

০৩

দক্ষিণ বেদকাশী মধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

০৪

মহেশ্বরীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

০৫

শরিষামুট জি,বি আদর্শ নিঃমাঃ বালিকা বিদ্যালয়

 

 

০৬

হড্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

০৭

কাটনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

০৮

ভাগবা এইচ,বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

০৯

বরবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

১০

গজী আঃ জববার মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

১১

কয়রা শকবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

১২

এন,এ,জি,ডি কান্তরাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

১৩

গ্রাজুয়েট্স মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

১৪

জাকারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

১৫

ভি,কে,এস গিলাবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

১৬

মিলনী মাধ্যমিক বিদাপীঠ

 

 

১৭

চান্নির চক মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

১৮

হাতিয়ার ডাঙ্গা পাবলিক স্কুল

 

 

১৯

হড্ডা নিঃমাঃ বালিকা বিদ্যালয়

 

 

২০

সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিধ্যালয়

 

 

২১

প্রতাপস্মরনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

২২

সপ্তগ্রাম আদর্শ নিঃমাঃ বিদ্যালয়

 

 

২৩

মালিখালী বি,বি আদর্শ নিঃ মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

২৪

চন্ডিপুর ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

২৫

হড্ডা ডি,এম, মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

২৬

কালিকাপুর চৌকুনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়

 

 

২৭

কালনা আমিনিয়া ফাজিল মাদরাসা

 

 

২৮

কয়রা উঃ চক মাদ্রাসা

 

 

২৯

কয়রা উত্তর চক কামিল মাদ্রাসা

 

 

৩০

ঘুগরাকটি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রারাসা

 

 

৩১

কুশোডাঙ্গা আঃ কোমর উদ্দীন আলিম মাদরাসা

 

 

৩২

 বে,সীন মিম বায়লাহারানিয়া আঃ মাঃ

 

 

৩৩

অর্জুরপুর হাসানিয়া দাখির মাদরাসা

 

 

৩৪

এম, এ দারুল এহসান দখিল মাদরাসা

 

 

৩৫

এম,এ, দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসা

 

 

৩৬

কালনা মহিলা দাখিল মাদরাসা

 

 

৩৭

কয়রা মদিনাবাদ দাখিল মাদরাসা

 

 

৩৮

কয়রা মদিনাবাদ দারুচ্ছালাম মহিলা দাখিল মাদরাসা

 

 

৩৯

খিরোল মহিরা দাখিল মাদরাসা

 

 

৪০

 গোবরা দাখিল মাদরাসা

 

 

৪১

 চৌকুনী ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা

 

 

৪২

চান্নির চক পি,কে দাখিল মাদরাসা

 

 

৪৩

জয়পুর শিমলার আইট দাখিল মাদরাসা

 

 

৪৪

 দেয়াড়া অন্তাবুনিয়া দাখিল মাদরাসা

 

 

৪৫

দক্ষিণ মহেশ্বরীপুর দাখিল মাদরাসা

 

 

৪৬

নারানপুর মহিলা দাখিল মাদরাসা

 

 

৪৭

পি,কে, এস,এ দারুচ্ছুন্নাহ দাঃ মাদরাসা

 

 

৪৮

 বেজপাড়া হায়াতুন্নেছা দাখিল মাদরাসা

 

 

৪৯

 বেদকাশী হাবিবীয়া দাখিল মাদরাসা

 

 

৫০

সাতহালিয়া গাউসুল আযম দাঃ মাঃ

 

 

৫১

সুন্দরবন সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদরাসা

 

 

৫২

কয়রা আছিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসা

 

 

৫৩

ডি,এফ নাকশা আলিম মাদরাসা

 

 

 

 

 

কয়রা উপজেলার যে সমস্ত স্থানে ওয়াপদার বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত ও ক্ষয়ক্ষতি হয় তার বিবরণঃ

            খুলনা জেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত কয়রা উপজেলা। সুন্দরবনের কোলে অবস্থিত এ উপজেলার চারদিক নদী ঘেরা। এর পূর্ব সীমানায় শাকবাড়িয়া নদী, দক্ষিণে আড়পাঙ্গাসিয়া নদী, পশ্চিমে বিখ্যাত কপোতাক্ষ নদ এবং উত্তরে রয়েছে কয়রা শাকবাড়িয়া ও আড়পাঙ্গাসিয়া নদী, এ ছাড়া পূর্ব ও দক্ষিণ পাশ জুড়ে রয়েছে সুন্দরবন। অর্থাৎ শাকবাড়িয়া ও আড়পাঙ্গাসিয়া নদীর পারেই সুন্দরবন। আর কপোতাক্ষ নদের পূর্ব পারে কয়রা উপজেলা এবং পশ্চিম পারে অবস্থিত সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা। শাকবাড়িয়া ও আড়পাঙ্গাসিয়া নদীদ্বয় যেমন কয়রা উপজেলা ও সুন্দরবনকে বিভক্ত করে রেখেছে, ঠিক তেমনি কপোতাক্ষ নদ ও সাতক্ষীরা জেলা ও কয়রা উপজেলাকে পৃথক করে রেখেছে। আর কয়রা নদীর দু’পারেই কয়রা উপজেলা।  ফলে কয়রা উপজেলার চতুর্দিক নদী দিয়ে ঘেরা বা বেষ্টিত। এ সমস্ত নদ-নদীতে জোয়ার-ভাটা হয়। পানির লবনাক্ততা ও খুব বেশী।

            বিষাক্ত লবনাক্ততা ও জোয়ারের পানির হাত থেকে জনপদ ও ফসলকে বাঁচানোর লক্ষে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তৈরী হয় উচু ওয়াপদার বাঁধ। এর পূর্বে এ সমস্ত এলাকায় ছিল ছোট ছোট ভেড়ি বাঁধ। স্থানীয় জন সাধারণ স্ব উদ্যোগে ফসল, ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য এ সমস্ত বেড়ি বাঁধ দিত। কোথাও বাঁধ ভেঙে গেলে গ্রামের বা এলাকার লোকজন সমবেত প্রচেষ্টায় বাঁধ রক্ষা করত। ওয়াপদার বাঁধ হওয়ার পর মানুষ কিছুটা স্বস্থির নিঃম্বাস ফেললেও আস্তে আস্তে তা ক্ষীণ হতে থাকে। কেননা দীর্ঘদিন ওয়াপদার বাঁধ গুলো সংস্কারের অভাবে তা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর এরই কারণে নিত্য নৈমিত্তিক দেখা দিচ্ছে ভাঙন। নদী ভাঙন ও ওয়াপদার রাস্তা বাঙনের ফলে বারবার ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান পর্যন্ত এ উপজেলার যে সমস্ত জায়গায় ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছে নিম্নে তার বিবরণ তুলে ধরা হলো।

            ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাটমারচর গ্রামের পাশে হাজতখালীর ‘কল খালি’ নামক জায়গায় ওয়াপদার রাস্তা ভেঙে পুরা কাটমারচর এলাকা লবণ পানিতে প্লাবিত হয়। দীর্ঘ ৭ (সাত) বছর অত্র এলাকা লবণ পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এর ফলে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়। ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা, ফসলাদি ও গবাদি পশু সহ রাস্তাঘাটের ভীষন ক্ষতি হয়। এলাকায় অভাব দেখা দেয়। এ সময়ে অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। দীর্ঘ সাত বছর একটানা জোয়ার ভাটা ওঠা নামা করার ফলে বহু জমি খালে পরিণত হয়। যে খাল আজও বিদ্যমান।      

            ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে এ উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের হায়াতখালী বাজারের পূর্ব পাশে নদী ভাঙনে ওয়াপদার রাস্তা ভেঙে লবণ পানিতে এলাকা প্লাবিত হয়। সময়টা ছিল জুলাই মাস। এ ভাঙন এক সপ্তাহ কাল ছিল। স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে বাঁধ দেওয়া হয়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল কম।

            ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ৩টি স্থানে ওয়াপদার রাস্তা ভেঙে লবণ পানিতে এলাকা প্লাবিত হয়। স্থান ৩টি যথা, (১) পশ্চিম হড্ডার জয়বাংলা খাল। (২) পশ্চিম হড্ডার দোঁহা মাথার খাল এবং (৩) সাতানীর কাটকাটার খাল। এ তিনটি স্থানে ভাঙনের ফলে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। ক্ষয়ক্ষতি ও হয়েছিল বেশ। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে স্থানীয় জনসাধারণের প্রচেষ্টায় উক্ত ভাঙন বাঁধা হয়।

            ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে মহারাজপুর ইউনিয়নের ‘পবনা’ নামক শাকবাড়িয়া  নদী সংলগ্ন স্থানে ওয়াপদা ভেঙে লবণ পানিতে এলাকা প্লাবিত হয়। এখানে একটি স্লুইজ গেট ছিল। এ গেট ভেঙে লবণ ঢোকে। এ ভাঙনের ফলে মহারাজপুর ইউনিয়নের পূর্ব অংশ এবং কয়রা ইউনিয়নের উত্তর-পূর্ব অংশ প্লাবিত হয়। দীর্ঘ ৭ মাস এ এলাকা লবণ পানিতে ডুবে থাকায় ভ্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়। কাঁচা ঘরবাড়ি, ফসলাদি, গবাদি পশু সহ অন্যান্য বিষয়ে ক্ষয় ক্ষতি হয়।

            ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরীা ঘূর্ণিঝড় হয়। এ ঝড়ের নাম ছিল ‘হারিকেন’।  ২৮ নভেম্বর থেকে প্রবল বাতাস সহ বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর আস্তে আস্তে বাতাসের গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে সাথে প্রবল বৃষ্টি। পরদিন ২৯ নভেম্বর মঙ্গলবার। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘হারিকেন’। এর তীব্রতা ছিল ঘন্টায় ২২০ কিঃমিঃ এবং ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ছিল (আবহাওয়ার পূর্বাভাস)। প্রায় সারা রাত ধরে এ ঝড় হয়। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পূর্ব দিক থেকে এবং শেষ রাতে পশ্চিম দিক থেকে এ ঝড় প্রবাহিত হয়। ঝড়ের গতি এতই ভয়ানক ছিল, যেন মুহুর্তের মধ্যে সব কিছু তছনছ করে দিল। হাজার হাজার ঘর বাড়ি, গাছপালা ভেঙে চুরমার হয়। অসংখ্য নৌকা ট্রলার ডুবি যায়। জঙ্গলে এবং সাগরে বহু লোক মারা যায়। গবাদি পশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেকের মতে, প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে এমন ভয়ঙ্কর ঝড় কেউ দেখেনি।

            এ ঝড়ে কয়রা ইউনিয়নের ২নং কয়রার ‘হরিণখোলা’ নামক স্থানে ওয়াপদা ভেঙে লবণ পানিতে এলাকা পত্মাবিত হয়। এতে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজন উক্ত বাঁধ বেঁধে ফেলে।

            ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসের প্রথম দিকে কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাটের পাশে ওয়াপদা ভেঙে লবণ পানিতে এলাকা প্লাবিত হয়। এ ভাঙনের ফলে কয়রা ইউনিয়নের অর্ধেকাংশ ডুবে যায়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘরবাড়ি, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী, ফসলাদি ও মাছের ঘের ভীষণ ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হয়। কয়েক মাসের মধ্যে এ বাঁধ বাঁধা সম্ভব হয়।

            ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামের ওয়াপদার রাস্তা ভেঙে লবণ পানিতে এলাকা প্লাবিত হয়। এর ফলে দশালিয়া গ্রাম সহ কয়েকটি গ্রাম ডুবে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। অল্প দিনের মধ্যে এলাকার জন সাধারণ উক্ত বাঁধ আটকাতে সক্ষম হয়।

            ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মে ১৫ মে জলোচ্ছাসে কয়রা উপজেলার কয়রা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থানের ওয়াপদার রাস্তা ভেঙে এলাকা লোনা পানিতে ডুবে যায়। ২নং কয়রার খেয়াঘাট হরিণ খোলার ২ জায়গায়, ঘাটাখালির ১ জায়গায় এবং মদিনাবাদের ১ জায়গায় মোট চারটি স্থানে ওয়াপদা ভাঙনের ফলে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়ে বহু ক্ষয় ক্ষতি হয়। পরে এ সমস্ত জায়গায় বাঁধ দেওয়া হয়।

            ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামের এরফান সানার বাড়ির সামনে ওয়াপদার রাস্তা ভেঙে লবণ পানিতে এলাকা প্লাবিত হয়। দশালিয়া নদী ভাঙনের ফলে প্রায় প্রতি বছরই ভাঙন লেগে থাকে। প্রত্যেকটি নদী ভাঙনে ক্ষয় হয়।

 

                        ২০০০ খ্রিস্টাব্দের কয়রা উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ওয়াপদার রাস্তা ভেঙে এলাকা লোনা পানিতে প্লাবিত হয়। এর মধ্যে কয়রা ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাটের দক্ষিণ পাশ। এখানে ওয়াপদা ভাঙনের ফলে মদিনাবাদ, গোবরা, ঘাটাখালি, ২নং কয়রার আংশিক এবং হরিণ খোলা প্লাবিত হয়ে বেশ ক্ষয় ক্ষতি হয়। কাঁচা ঘর বাড়ি, মাছের ঘের, ফসলাদির মারাত্মক ক্ষতি হয়। অল্প দিনের মধ্যে এ ভাঙন স্থানে বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়।

            অন্যটি হলো দক্ষিণ বেদকাশীর বীনাপানি গ্রামের পূর্বা মাথায় শাকবাড়িয়া নদীর ওয়াপদা ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। এ ভাঙনের ফলে পুরা দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন ডুবে যায়। প্রায় দু মাস ডুবে ছিল। তারপর বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়। এ ওয়াপদা ভাঙনের ফলে বেশ ক্ষয় ক্ষতি ঞয়। ইউনিয়নের কাঁচা ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, ফসলাদি ও পশু সম্পদের বেশ ক্ষতি হয়। 

২০০০ খ্রিস্টাব্দে কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামের জেহের আলী মাতববারের বাড়ির সামনের ওয়াপদার রাস্তা ভেঙে কপোতাক্ষের লোনা পানিতে ডুবে যায়। এ ভাঙনেরফলে ঘরবাড়ি, ফসল, রাস্তাঘাট সহ অন্যান্য ক্ষয় ক্ষতি হয় প্রচুর।

            ২০০২ খ্রিস্টাব্দে কয়রা উপজেলার কয়রা ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশে ওয়াপদার রাস্তা ভেঙে প্রায় সম্পুর্ণ ইউনিয়ন লবণ পানিতে ডুবে যায়। এ ভাঙনে পানির চাপে ওড়া তলার স্লুইজ  গেট ভেঙে লবণ পানি ঢুকে এলাকা ডুবে যায়। এলাকার জনসাধারণ স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে গেটের খালে বাঁধ দিয়ে এ লবণ পানি থেকে রক্ষা পায়। এ ভাঙনের ফলে বেশ ক্ষয় ক্ষতি হয়। এলাকার জনসাধারণ দিনরাত কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে বাঁধ আটকাতে সক্ষম হয়।

 

            ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে কয়রা উপজেলার কয়রা ইউনিয়নের হরিণখোলা গ্রামের ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে ইউনিয়নের আংশিক ডুবে যায়। অল্প দিনের মধ্যে এলাকার মানুষ একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে উক্ত বাঁধ বাঁধতে সক্ষম হয়। এতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ ছিল সামান্য।

 

            ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে কয়রা উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ২ স্থানের ওয়াপদার রাস্তা ভেঙে পানিতে প্লাবিত হয়। তার মধ্যে কয়রা ইউনিয়নের কয়রা খালের গোড়ায় স্লুইজ গেট ভেঙে লবণ পানি ঢুকে এলাকা ডুবে যায়। এলাকার জনসাধারণ স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে গেটের খালে বাঁধ দিয়ে এ লবণ পানি থেকে রক্ষা পায়। এ ভাঙনের ফলে বেশ ক্ষয় ক্ষতি হয়।

            অপর ভাঙনটি ছিল মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানী গ্রামের কাছারী বাড়ির পাশে। এখানে নদী ভাঙনের কারণে ওয়াপদার রাস্তা ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে জন সাধারণ বাঁধটি বেঁধে ফেলতে সক্ষম হয়। এতে খুব বেশী ক্ষয় ক্ষতি হয়নি।

            ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে কয়রা উপজেলার কয়রা ইউনিয়নের হরিণ খোলা গ্রামের ওয়াপদা ভেঙে এবং দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা গ্রামের ওয়াপদা ভেঙে লবণ পানিতে তলিয়ে যায়। হরিণ খোলার ওয়াপদা ভাঙার ফলে হরিণখোলা, গোবরা, ঘাটাখালি, মদিনাবাদ ও ২নং কয়রা গ্রাম ডুবে যায়। অল্প দিনের মধ্যে বাঁধ বাঁধা হয় এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অল্প।

            দক্ষিণ বেদকাশীর আংটিহারা ওয়াপদা ভাঙনের ফলে গোটা দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন ডুবে যায়। কয়রার হরিণ খোলার বাঁধ অল্প দিনে বাঁধা সম্ভব হলেও দক্ষিণ বেদকাশীর আংটিহারার বাঁধ বাঁধা সম্ভব হয়নি। এক বছর এ ভাঙনের  ফলে এ ইউনিয়নের অপরিসীম ক্ষয় ক্ষতি হয়। এ ক্ষয় ক্ষতির কবলে পড়ে থাকা অবস্থায় ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে আইলা এসে সব কিছু লন্ড ভন্ড করে দেয়। যাকে বলে মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ।

 

সর্বশেষ ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের, গাববুনিয়া গ্রামের ওয়াপদা ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। কপোতাক্ষ নদের তীরে ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে গাববুনিয়া, গাজীপাড়া, পুটিঘেরী, কাঠকাটা, বড়বাড়ীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম লোণা পানিতে প্লাবিত হয়। এতে বেশ ক্ষয়-ক্ষতি হয়। স্থানীয় জনসাধারণ ও প্রশাসনের সমবেত প্রচেষ্টায় দু’দিন পরে বাঁধ বাঁধা সম্ভব হয়।